ঢাকা,সোমবার, ৬ মে ২০২৪

রাবার ড্যামের পানিতেই কৃষকের সর্বনাশ

সোয়েব সাঈদ, রামু ::

রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ৮টি গ্রামের প্রায় ৫ শত একর জমিতে সদ্য রোপন করা বোরো ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। কক্সবাজার সদর উপজেলার বাংলাবাজারে বাঁকখালী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি. পরিচালিত রাবার ড্যামের পানি বৃদ্ধি করার কারনে এসব বোরো ক্ষেত প্লাবিত হয়েছে। এ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ওই এলাকার হাজারো কৃষক।

রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের বারৈয়া পাড়া, উমখালী, কাঠির মাথা, করইল্যামুরা, চাইল্যাতলী, তৈতয়াপাড়া, জনু মাতবরপাড়া, জি¦নের ঘোনা এলাকায় রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে পানিতে একাকার হওয়া বোরো খেতের দৃশ্য দেখা গেছে।

এসময় ক্ষুব্দ কৃষকরা অবিলম্বে রাবার ড্যামের পানি কমিয়ে তাদের সর্বস্ব দিয়ে চাষকৃত বোরো খেত রক্ষার জন্য রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটি এবং প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা তখন ফসল রক্ষার জন্য হাহাকার করছিলেন।

দক্ষিণ মিঠাছড়ি তৈতয়াপাড়া এলাকার মৃত লাল মিয়ার ছেলে সেচ কাজে নিয়োজিত শফিকুর রহমান জানান, তার সেচ স্কীমের আওতায় ৪০ কানি জমি রয়েছে। এরমধ্যে সদ্য বোরো আবাদকৃত ২৫ কানি জমি ১০/১২দিন ধরে পানিতে ডুবে আছে।

উমখালী আবু বক্কর বাপের পাড়ার স্কীম ম্যানেজার আনছারুল হক জানান, তার স্কীমের আওতায় ৩৫ একর জমি রয়েছে। কিন্তু পানিতে প্লাবিত হওয়ার কারনে এখানে মাত্র ৪/৫ একর জমিতে চাষাবাদ করা গেছে। তাও এখন পানিতে ডুবে আছে। সহসা রাবার ড্যামের পানি না কমালে রোপনকৃত বোরো খেত সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যাবে।

চাইল্যাতলী বারৈয়াপাড়ার কৃষক মনির আহমদ জানান, তিনি ৪ একর জমিতে বোরো চাষাবাদ করেছেন। এরমধ্যে ৩ একর বোরো খেত পানিতে ডুবে গেছে। ২/১ দিনের মধ্যে পানি না কমলে এসব খেত ধবংস হয়ে যাবে। এখন তিনি ক্ষেত বিনষ্ট হয়ে আর্থিক লোকসানের আশংকা করছেন।

স্থানীয় স্কীম ম্যানেজার আবদুল মঈন, কৃষক রশিদ আহমদ, সিরাজুল হক, শফিউল আলম জানালেন, বিষয়টি তারা ইতিপূর্বে রাবার ড্যাম কমিটি ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছিলেন। কিন্তু কেউ বিষয়টি সমাধানে এগিয়ে আসেনি। যার ফলে ১৫ দিন এসব এলাকার বোরো খেত পানিতে ডুবে আছে।

বারৈয়াপাড়া এলাকার কৃষক আবদুর রহমান জানান, কেবল বোরো আবাদ নয়, তার শীতকালীন সবজি খেতও রাবার ড্যামের অতিরিক্ত পানিতে ডুবে গেছে। এতে তিনি ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন।

একে আজাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, ইউনিয়নের ১০টিরও বেশী গ্রামের প্রাঢ ৫ শত একর জমি রাবার ড্যামের পানিতে একাকার হয়ে গেছে। এজন্য বোরো খেত বিনষ্ট হওয়ার আশংকাং কৃষকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। তিনি কৃষকদের বৃহত্তর স্বার্থে বিষয়টি সমাধানের জন্য রাবার ড্যাম পরিচালনা কমিটি এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বাঁকখালী পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লি. এর এডহক কমিটির সভাপতি মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, পানি বৃদ্ধির বিষয়টি কৃষকরা তাদের অবহিত করেছিলো। কিন্তু পানি কমালেও অনেকে আপত্তি করে। এ নিয়ে তারা বিপাকে আছেন। এরপরও শীঘ্রই সরেজমিন এলাকায় গিয়ে তদন্ত করে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে।

দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রাবার ড্যামের পানি বেড়ে যাওয়ায় বোরো আবাদ ডুবে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জানান। ইউনিয়নের কাটির মাথা, মগপাড়া সহ অনেক এলাকায় পানি বেড়ে যাওয়ায় এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় রোপন করা খেত যেমন ডুবেছে, তেমনি অনেক আবাদও করতে পারছে না।

রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাজাহান আলি জানিয়েছেন, রাবার ড্যাম কমিটির সাথে সমন্বয় করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: